বুধবার, ৮ এপ্রিল, ২০২০

সমস্যা যখন গ্যাস্ট্রিক - পর্ব - ১

সমস্যা যখন গ্যাস্ট্রিক - পর্ব - ১

আমাদের সমাজে গ্যাস্ট্রিক নামে পরিচিত রোগটি আসলে পেপটিক আলসার ডিজিজ বা পাকস্থলীর ক্ষত রোগঃ খাদ্য পরিপাকতন্ত্রের মাঝে পাকস্থলীর ক্ষত রোগ বা পেপটিক আলসার ডিজিজ (পি ইউ ডি) এ ভূগেননি এমন কারও সন্ধান পাওয়া খুবই বিরল। আমার মতে জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে প্রায় সবাই একবার হলেও পেপটিক আলসার ডিজিজ এ আক্রান্ত হয়ে থাকেন। সংক্ষেপে এ রোগ সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেই -
পেপটিক আলসার ডিজিজ (পি ইউ ডি) বলতে কি বুঝায়ঃ-খাদ্য পরিপাকতন্ত্রের যে কোন জায়গায় ক্ষত হওয়াকেই সাধারনত পেপটিক আলসার ডিজিজ বলা হয়। মুখগহবর থেকে পায়ু পথের ছিদ্র পর্যন্ত যে কোন অংশের ক্ষতই এর অন্তর্ভূক্ত। তবে পেপটিক আলসার বলতে বিশেষত খাদ্যনালী (ইসোফেগাস) এর নিচের অংশ যা পাকস্থলীর সাথে সংযুক্ত থাকে,এখান থেকে শুরু করে সমস্থ পাকস্থলীর যে কোন অংশ এবং পাকস্থলী যেখানে শেষ ও ডিওডেনামের শুরু, এবং এর পরবর্তী কিছু অংশের ক্ষতকেই বোঝানো হয়।

মুলত কেন এ ক্ষত হয়ঃ- খাদ্য পরিপাক তন্দ্রের যে সকল জায়গায় মিউকোসার পাতলা স্থরটি এসিড-পেপসিনের ভারসম্যহীনতার কারনে পুড়ে ক্ষত তৈরি হয়।

ক্ষতের ধরনঃ - ক) উপসর্গ অনুযায়ী ২ ধরনের  ১। একুইট বা তাৎক্ষনীক পেপটিক আলসার

২। ক্রনিক বা চলমান বা দীর্ঘস্থায়ী পেপটিক আলসার  খ) ক্ষতের স্থান অনুযায়ী ২ ধরনের ১। গ্যাস্ট্রিক আলসার ২। ডিওডেনাল আলসার


খাদ্য পরিপাক তন্ত্রের কোন জায়গায় এ ক্ষত হয়ঃ -

সাধারনত নিম্নোক্ত ৬ টি স্থানে এ ক্ষত হয়ে থাকেঃ

১।খাদ্য নালীর (ইসফেগাসের) শেষের অংশে যা পাকস্থলীর সাথে সংযুক্ত ২।পাকস্থলীর ছোট বাঁক (Lesser curvature of stomach) ৩।ডিওডেনামের প্রথম অংশ (First part of duodenum) ৪। জেজুনাম - মেকেল্স ডাইভারটিকুলামের খুব কাছাকাছি স্থানে (Jejunum - adjacent to Meckel's diverticulum) ৫। খাদ্য পরিপাক  তন্ত্রের যেকোন অংশে। জলিনজার-ইলিশন-সিনড্রম নামক অসুখের বেলায় খাদ্য পরিপাক তন্ত্রের যে কোন জায়গায় হতে পারে ৬।শুল্য চিকিৎসা বা অপারেশনের দ্বারা পাকস্থলীর কোন অংশ     ক্ষুদ্রান্ত্রের জেজুনাম নামক অংশের সাথে সংযুক্ত করে দিলে এই সংযুগস্থল থেকে শুরু করে জেজুনামের পরবর্তী ৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত যে কোন অংশে।

কাদের বেশি হয় ও কি কারনে হয় -  বয়সঃ (ডিওডেনাল আলসার ২০-৫০ বয়স) গ্যাস্ট্রিক আলসার - (৫০ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়স) জেন্ডার বা লিংজ্ঞঃ ডিওডেনাল আলসার - পুরুষ অনুপাত মহিলা = ৪ঃ ১;স্ট্রিক আলসার - পুরুষ অনুপাত মহিলা = ২ঃ ১।হেরিডিটি বা বংশানু ক্রমিক যাদের রক্তের গ্রুপ "০"  "ও"; যাদের রক্তের "সিরাম পেপসিনোজেন-১" এর পরিমান বেশি থাকে।হেলিকোব্যাক্টোর পাইলোরী  - ৯০ ভাগ ডিওডেনাল আলসার ও ৭০ ভাগ গ্যাস্ট্রিক আলসার এর জন্য হয়ে থাকে। এন এস এ আই ডি (ব্যাথানেশক ঔষধ) - ব্যাথানাক ঔষধ যা পাকস্থলীর ভেতরের দিককার সবচেয়ে পাতলা মিউকোসার স্থরকে নষ্ট করে ফেলে অতিরিক্ত এসিড নিঃসরনের কারনে ৩০ ভাগ গ্যস্ট্রিক আলসার ও কিছু ডিওডেনাল আলসার হয়।ধুমপান-ধুমপান পাকস্থলীর এসিড নিঃসরনের উত্তেজক হিসেবে কাজ করে যা পেপটিক আলসার হওয়ার সম্ভাবনাকে অনেকগুন বাড়িয়ে দেয়।এসিড-পেপসিন বনাম মিউকোসাল রেজিসটেন্স - পাকস্থলীর যে কোন জায়গার ক্ষত হতে যদি এসিড - পেপসিনের নিঃসরন বেড়ে যায় এবং মিউকসাল রেজিসটেন্স কমে যায়।অন্যান্য-দীর্ঘস্থায়ী মানুষীক চাপ,মদ্যপান,ধুমপান ,স্টেরয়েড জাতিয় ঔষধের ব্যবহার ,অনিয়মিত ও অপরিমিত আহার ,অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার, ভাঁজা পুড়া খাবার ,অতিরিক্ত ব্যাথা নাষক ঔষধ সেবন।

রোগের কারনে রোগী থেকে পাওয়া তথ্য -

রোগীর কাছ থেকে তথ্য অনুযায়ী ২ ধরনের পেপটিক আলসার সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনাঃ-



লক্ষন 
ডিওডেনাল আলসার (ডি ইউ)
গ্যাস্ট্রিক আলসার (ডি ইউ)
১। ব্যাথা
  • ইপিগ্যাস্ট্রিক পেইন (বুক পাজরের নিচের অংশ ও পেটের উপরেরে অংশের সংযোগ স্থলে ব্যাথা)

  • হাংগার পেইন বা ক্ষিদা জনীত ব্যাথা খালি পেট থাকার কারনে ব্যাথা

  • নাইট পেইন বা রাত্রিকালীন ব্যাথা





  • পিরিওডিক পেইন বা নির্দিষ্ট সময় পরপর ব্যাথা বা পর্যায়ক্রমে ব্যাথা

একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ব্যাথা হয়। রোগী তার একটি আজ্ঞুল দিয়ে ব্যাথার স্থান বলে দিতে পারে। এজন্য এর অন্য নাম পয়েনটিং সাইন।

খালি পেটে ব্যাথা হয়।



যখনই পেট খালি হয় তখনই ব্যাথা শুরু হয়। রোগী রাতে ঘুমিয়ে পরলেও পেট খালি হওয়ার সাথে সাথে ব্যাথা শুরু হয় এবং ব্যাথার কারনে রোগীর ঘুম ভেঙ্গে যায়।

একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর ওন এগেইন/ ওফ এগেইন এরকম পালাক্রমে ব্যাথার শুরু ও শেষ হয়।

পুরোটা পেট জুড়ে ব্যথা হয়।





কোন কিছু খাওয়ার পর ব্যাথা শুরু হয়।


এ রকম হয় না।






এ রকম হয় না।
২। ব্যাথা কমে কিভাবে 
খাবার খেয়েনিলে ব্যাথা কমে যায়। রোগী দুধ, এন্টাসিড জাতীয় ঔষধ খেয়ে থাকে 
ঢেকুর তোললে বা বমি করলে অনেক সময় ব্যাথা কমে যায়। রোগী অনেক সময় গলায় হাত ঢূকিয়ে নিজে নিজে বমি করে থাকে ব্যাথা কমার জন্য। বমি করার পর ব্যাথা কমে যায়। 
৩। রোগী দেখতে কেমন হয়
সাস্থ্যবান, নাদুস নুদুস 
শুকনো, হালকা পাতলা 
৪। রোগীর ওজন 
ওজন বেশি থাকে। কোন না কোন খাবার কিছুক্ষন পরপর খাওয়ায় রোগী অভ্যস্থ হয়ে পরে কিন্তু সে অনুযায়ী প্ররিশ্রম না করায় ওজন বেড়ে যায়। 
ওজন কমে যায়। খাবার খেলেই পেটের ব্যাথা শুরু হয়ে যায় তাই ব্যাথার ভয়ে রোগী খাবার খেতে চায় না  
৫। চিকিৎসা না নিলে কি হয় 
একুইট বা তাৎক্ষনীক -
  • পারকরেশন বা খাদ্য নালী ছিদ্র হয়ে যায় 
  • হেমটোমেসিস বা রক্তবমি 
  • মেলেনা বা রক্তমিশ্রিত পায়খানা 
ক্রমিক বা দীর্ঘকালীন -
  • পাইলোরিক স্টোনোসিস 
  • পাকস্থলীর শেষের অংশে যা পাইলোরিক ইন্ড নামে পরিচিত এ অংশটা সুরু বা চিকন হয়ে যায়। এর অন্য নাম গ্যাস্ট্রিক আউটলেট অবস্ট্রোকশন 
সাধারনত -
একুইট বা তাৎক্ষনীক কোন প্রভাব পড়ে না। কিন্তু দীর্ঘ কালিন বা ক্রনিক প্রভাব পরে।



ক্রমিক বা দীর্ঘকালীন -
  • আউয়ার গ্লাস ডিফরমিটি (hour glass diformity)
  • টি পট ডিফরমিটি(Tea pot deformity)
  • কারসিনোমা বা ক্যান্সার যা খুব কম মানুষেরই হয়ে থাকে।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

শুভঙ্করের ফাঁকি

শুভঙ্করের ফাঁকি কন্যা তুমি ধর্ষিতা হও এটাই সমাজ চায়! বলতে পারো তা না হলে বিচার কি সে পায়? হিংস্র দানব জন্মে মানব সুযোগ পেলেই হায় ...