সোমবার, ৬ এপ্রিল, ২০২০

করোনা_ভাইরাস (যা না জানলেই নয়)

করোনা_ভাইরাস (যা না জানলেই নয়)





মানব করোনাভাইরাসের নিম্নলিখিত প্রকরণ আবিষ্কৃত হয়েছে:
১) মানব করোনাভাইরাস ২২৯ই (এইচকোভি-২২৯ই)
২) মানব করোনাভাইরাস ওসি৪৩ (এইচকোভি-ওসি৪৩)
৩) মানব করোনাভাইরাস এনএল৬৩ (এইচকোভি-এনএল৬৩, নিউ হ্যাভেন করোনাভাইরাস)
৪) মানব করোনাভাইরাস এইচকেইউ১
এবং নিচের তিনটি, সাধারণত মারাত্মক হয়ে থাকে:
১) সিভিয়ার এ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স-কোভি বা সার্স ক্ল্যাসিক)
২) মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম-সম্পর্কিত করোনাভাইরাস (মার্স-কোভি), পূর্বে “নোভেল করোনাভাইরাস ২০১২” এবং “এইচকোভি-ইএমসি” হিসেবে পরিচিত ছিল
৩) সিভিয়ার এ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম করোনাভাইরাস ২ (সার্স-কোভি-২), পূর্বে “২০১৯-কোভি” বা “নোভেল করোনাভাইরাস ২০১৯” হিসেবে পরিচিত ছিল
করোনাভাইরাস এইচকোভি-২২৯ই, -এনএল৬৩, -ওসি৪৩ এবং -এইচকেইউআই মানুষের মধ্যে ক্রমাগত ছড়ায় এবং বিশ্বজুড়ে প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশুদের শ্বসনতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়।
ক্ষতির সম্ভাবনার দিক থেকে করোনাভাইরাস বেশ বৈচিত্র্যময়।
উপসর্গরূপে
- কিছু প্রকরণ (যেমন মার্স-কোভি) আক্রান্ত রোগীর প্রায় ৩০%-এরও বেশি মারা যান,
- কিছু প্রকরণ মোটামুটি নিরীহ, যেমন সাধারণ ঠাণ্ডা।এগুলো সাধারণত শীতকালে এবং বসন্ত ঋতুর শুরুর দিকে হয়।
করোনাভাইরাস ঠাণ্ডার পাশাপাশি বড় ধরণের কিছু উপসর্গ সৃষ্টি করে, যেমন
~ জ্বর,
~ ফুলে যাওয়া ন্যাজোফেরিঞ্জিয়াল টনসিল বা অ্যাডিনয়েডের ফলে গলা ব্যথা,
~করোনাভাইরাস ফুসফুসীয় রোগ
নিউমোনিয়া ঘটাতে পারে
(সরাসরিভাবে ভাইরাসজনিত নিউমোনিয়া অথবা পরোক্ষভাবে ব্যাকটেরিয়াজনিত নিউমোনিয়া) এবং
ব্রঙ্কাইটিসের
(সরাসরিভাবে ভাইরাসজনিত ব্রঙ্কাইটিস অথবা পরোক্ষভাবে ব্যাকটেরিয়াজনিত ব্রঙ্কাইটিস) মাধ্যমে।
~ এই ভাইরাস একইসাথে
সিভিয়ার এ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) এবং উর্ধ্ব ও নিম্ন শ্বাসনালী সংক্রমণ ঘটায়।
করোনাভাইরাস রোগ ২০১৯ (কোভিড-১৯) এর
বিশেষত্ব - তীব্র শ্বসনতন্ত্র সংক্রমণ

#লক্ষণ_ও_উপসর্গ
জ্বর ৮৭.৯%
শুকনা কাশি ৬৭.৭%
ক্লান্তি ৩৮.১%
থুতু উৎপাদন বেড়ে যাওয়া ৩৩.৪%
ঘন ঘন শ্বাসধারণ ১৮.৬%
মাংসপেশী ব্যথা বা মাংসপেশির সংযোগে ব্যথা ১৪.৮%
গলা ব্যথা ১৩.৯%
মাথা ব্যথা ১৩.৬%
শরীর ঠাণ্ডা ১১.৪%
বমি বা বমি-বমিভাব ৫.০%
নাকবন্ধ ৪.৮%
ডায়রিয়া ৩.৭%
কাশির সাথে রক্ত ০.৯%
কনজাঙ্কটিভাইটিস ০.৮%
এই ভাইরাসের ফলে আক্রান্তরা আপাতভাবে সুস্থ মনে হতে পারে, বা ফ্লু-এর মত উপসর্গ দেখা যেতে পারে।এর মধ্যে রয়েছে জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট। অপেক্ষাকৃত কম ক্ষেত্রে দেখা যায় উর্ধ্ব শ্বসনতন্ত্রের কিছু লক্ষণ যেমন হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়া, গলাব্যথা ইত্যাদি। গ্যাস্টোইনটেস্টিনাল উপসর্গ যেমন বমি-বমিভাব, বমি, ডায়রিয়া ইত্যাদিও খুব কম কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়। চীনে সংঘটিত কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে হৃদযন্ত্রের সমস্যা, যেমন বুক ব্যথা বা চেস্ট টাইটনেস এবং বুক ধড়ফড় করা বা পালপিটেশান।কিছুক্ষেত্রে এই ব্যাধির পরবর্তী ধাপ হিসেবে নিউমোনিয়া, একাধিক অঙ্গ বিকল এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে।
#সুপ্তাবস্থাঃ
আক্রান্ত ব্যক্তি সংক্রমিত হওয়ার কিছুদিন পরে উপসর্গ দেখা দেয়, এই সময়কে সুপ্তাবস্থা বলা হয়। কোভিড-১৯ রোগের সুপ্তাবস্থা সাযধারণ ৫ থেকে ৬ দিন তবে তা ২ থেকে ১৪ দিনও হতে পারে।
#সংক্রামণ_প্রক্রিয়াঃ
করোনাভাইরাস মানুষ-থেকে-মানুষে প্রধানত দুই প্রক্রিয়ায় ছড়াতে পারে।
ক) সংক্রমণের প্রথম প্রক্রিয়াঃ এটি দুই ধাপে ঘটে।
~ প্রথম ধাপ:
করোনাভাইরাস-সংক্রমিত ব্যক্তি ঘরের বাইরে গিয়ে মুখ না ঢেকে হাঁচি-কাশি দিলে করোনাভাইরাস তার আশেপাশের (১-২ মিটার পরিধির মধ্যে) বাতাসে কয়েক ঘন্টা ভাসমান থাকতে পারে।
~ দ্বিতীয় ধাপ:
সেই করোনাভাইরাস কণাযুক্ত বাতাসে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করলে অন্য ব্যক্তিদের ফুসফুসেও শ্বাসনালী দিয়ে করোনাভাইরাস প্রবেশ করতে পারে।
খ) সংক্রমণের দ্বিতীয় প্রক্রিয়াটি কয়েক ধাপে ঘটে।
~ প্রথম ধাপ:
করোনাভাইরাস-সংক্রমিত ব্যক্তি যদি কাশি শিষ্টাচার না মানেন, তাহলে তার হাতে বা ব্যবহৃত বস্তুতে করোনাভাইরাস লেগে থাকবে।
~ দ্বিতীয় ধাপ:
এখন যদি উক্ত ব্যক্তি তার পরিবেশের কোথাও যেকোনও বস্তুর পৃষ্ঠতলে সেই করোনাভাইরাসযুক্ত হাত দিয়ে স্পর্শ করেন, তাহলে সেই পৃষ্ঠতলে করোনাভাইরাস পরবর্তী একাধিক দিন লেগে থাকতে পারে।
~ তৃতীয় ধাপ: এখন যদি অন্য কোনও ব্যক্তি সেই করোনাভাইরাসযুক্ত পৃষ্ঠ হাত দিয়ে স্পর্শ করে, তাহলে ঐ নতুন ব্যক্তির হাতে করোনাভাইরাস লেগে যাবে।
~ চতুর্থ ধাপ : হাতে লাগলেই করোনাভাইরাস দেহের ভেতরে বা ফুসফুসে সংক্রমিত হতে পারে না, তাই এখন নতুন ব্যক্তিটি যদি তার সদ্য-করোনাভাইরাসযুক্ত হাতটি দিয়ে নাকে, মুখে বা চোখে স্পর্শ, কেবল তখনই করোনাভাইরাস ঐসব এলাকার উন্মুক্ত শ্লেষ্মাঝিল্লী দিয়ে দেহের ভিতরে প্রবেশ করবে ও প্রথমে গলায় ও পরে ফুসফুসে বংশবিস্তার করা শুরু করবে।
এজন্য উপরে লিখিত করোনাভাইরাস ছড়ানোর দুইটি প্রক্রিয়ার শুরুতেই এবং কিংবা ছড়ানোর প্রতিটি অন্তর্বতী ধাপেই যদি করোনাভাইরাসকে প্রতিহত করা যায়, তাহলে সফলভাবে এই ভাইরাস ও রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
#সংক্রামণ_রোধে_আমাদের_করণীয়ঃ
নিচের পরামর্শগুলি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পালন করা সকলের আবশ্যিক কর্তব্য।
অ) সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা:
করোনাভাইরাস কোনও লক্ষণ-উপসর্গ ছাড়াই দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে যেকোনও ব্যক্তির দেহে তার অজান্তেই বিদ্যমান থাকতে পারে। এরকম করোনাভাইরাস বহনকারী ব্যক্তি যদি কোনও কারণে হাঁচি বা কাশি দেন, তাহলে তার আশেপাশের বাতাসে ৩ থেকে ৬ ফুট দূরত্বের মধ্যে করোনাভাইরাসবাহী জলীয় কণা বাতাসে ভাসতে শুরু করে এবং ঐ পরিধির মধ্যে অবস্থিত অন্য যেকোনও ব্যক্তির দেহে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে। এ কারণে জনসমাগম বেশি আছে, এরকম এলাকা অতি-আবশ্যক প্রয়োজন না হলে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে যাতে বাতাসে ভাসমান সম্ভাব্য করোনাভাইরাস কণা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ না করতে পারে।
আ) হাত ধুয়ে জীবাণুমুক্তকরণ:
পরিবেশে অবস্থিত বিভিন্ন বস্তুতে করোনাভাইরাস লেগে থাকতে পারে, তাই এগুলি কেউ হাত দিয়ে স্পর্শ করলে তার হাতেও করোনাভাইরাস লেগে যেতে পারে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে করোনাভাইরাস কাঠ, প্লাস্টিক বা ধাতুর তৈরী বস্তুর পৃষ্ঠে গড়ে চার থেকে পাঁচ দিন লেগে থাকতে পারে। মানুষকে জীবনযাপনের প্রয়োজনে এগুলিকে প্রতিনিয়তই হাত দিয়ে স্পর্শ করতে হয়। তাই এগুলি স্পর্শ করার পরে হাত ভাল করে ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করা অত্যন্ত জরুরী।
হাত স্পর্শ করার ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রগুলির ব্যাপারে বিশেষ নজর দিতে হবে।
~ অন্য কোনও ব্যক্তির ব্যক্তিগত বস্তু যা হাত দিয়ে ঘনঘন স্পর্শ করা হয়, যেমন মোবাইল ফোন (মুঠোফোন), ল্যাপটপ, ইত্যাদি নিজ হাত দিয়ে স্পর্শ করা।
~ বহুসংখ্যক ব্যক্তি স্পর্শ করে এমন যন্ত্র, যেমন এটিএম যন্ত্র (নগদ টাকা প্রদানকারী যন্ত্র) ও অন্য কোনও যন্ত্রের (যেমন দোকানের বা অন্য কোনও স্থানের ল্যাপটপ, কম্পিউটারের মনিটর) বোতাম, চাবি, কিবোর্ড ও হাতল হাত দিয়ে স্পর্শ করা।
~ নিজ বাসগৃহের বাইরের যেকোনও আসবাবপত্র (চেয়ার, টেবিল, ইত্যাদি) হাত দিয়ে স্পর্শ করা।
~ নিজ বাসগৃহের বাইরের যেকোনও কামরা বা যানবাহনের দরজার হাতল হাত দিয়ে স্পর্শ করা।
~ কাগজ কলম টাকা, ব্যাংকের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড, ইত্যাদি এবং এগুলি যেখানে রাখা হয়, যেমন ওয়ালেট বা পার্স ইত্যাদির অভ্যন্তরভাগ হাত দিয়ে স্পর্শ করা।
~ রেস্তোরাঁ বা অন্য যেকোনও খাবার বিক্রয়কারী দোকানের থালা-বাসন-বাটি-পাত্র বা বোতল-গ্লাস হাত দিয়ে স্পর্শ করা। এইসব তৈজসপত্র বহু ব্যক্তি স্পর্শ করেন এবং এগুলিকে সবসময় সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে কি না, তা সম্পূর্ণ নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়।
~ ঘরের বাইরে যেকোনও স্থানের হাত মোছার তোয়ালে বা রুমাল যা একাধিক ব্যক্তি স্পর্শ করে, সেগুলিকে হাত দিয়ে স্পর্শ করা।
~ ঘরের বাইরে রাস্তায় বা অন্যত্র কারও সাথে করমর্দন করা (হাত মেলানো) বা কোলাকুলি করা বা ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা।
উপরোক্ত ক্ষেত্রগুলিতে হাত দিয়ে স্পর্শের পরে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং যত ঘনঘন সম্ভব হাত ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
#হাত ধোয়ার পদ্ধতি
© প্রথমে হাত পরিষ্কার পানিতে ভাল করে ভিজিয়ে নিতে হবে।
© এর পর হাতে বিশেষ জীবাণুমুক্তকারক সাবান (সম্ভব না হলে সাধারণ সাবান) প্রয়োগ করতে হবে ও ফেনা তুলে পুরো হাত ঘষতে হবে।
© হাতের প্রতিটি আঙুলে যেন সাবান লাগে, তা নিশ্চিত করতে হবে, এজন্য এক হাতের আঙুলের ফাঁকে আরেক হাতের আঙুল ঢুকিয়ে ঘষে কচলাতে হবে।
© দুই হাতের বুড়ো আঙুল সাবান দিয়ে ঘষা নিশ্চিত করতে হবে।
© এক হাতের তালুর সাথে আরেক হাতুর তালু ঘষতে হবে এবং এক হাতের তালু দিয়ে আরেক হাতের পিঠও সম্পূর্ণ ঘষতে হবে।
© প্রতিটি নখের নিচেও ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে।
ঘড়ি, আংটি বা অন্য যেকোন হাতে পরিধেয় বস্তু খুলে সেগুলির নিচে অবস্থিত পৃষ্ঠও পরিষ্কার করতে হবে।
© কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে ফেনা তুলে ভাল করে হাত ঘষতে হবে।
© পাত্রে রাখা স্থির পানিতে নয়, বরং পড়ন্ত পরিষ্কার পানির ধারাতে হাত রেখে ভাল করে হাত ধুয়ে সম্পূর্ণ সাবানমুক্ত করতে হবে।
© হাত ধোয়ার পরে তোয়ালে কিংবা রুমাল নয়, বরং একবার ব্যবহার্য কাগজের রুমাল দিয়ে সম্পূর্ণরূপে হাত শুকিয়ে নিতে হবে, কেননা গবেষণায় দেখা গেছে যে ভেজা হাতে ভাইরাস ১০০ গুণ বেশী বংশবিস্তার করে। একাধিক ব্যক্তির ব্যবহৃত তোয়ালে দিয়ে হাত শুকানো যাবে না, এবং একই তোয়ালে দিয়ে বারবার হাত শুকানো যাবে না, তাই একবার-ব্যবহার্য কাগজের রুমাল ব্যতীত অন্য যেকোনও ধরনের তোয়ালে বা রুমাল ব্যবহার করা উচিত নয়।
© হাত শুকানোর কাগজের রুমালটি দিয়ে ধরেই পানির কল বন্ধ করতে হবে এবং শৌচাগারের দরজার হাতল খুলতে হবে। পানির কল ও শৌচাগারের দরজার হাতলে ভাইরাস লেগে থাকতে পারে।এরপর কাগজের রুমালটি ঢাকনাযুক্ত বর্জ্যপাত্রে ফেলে দিতে হবে।
© যেহেতু দিনে বহুবার হাত ধুতে হবে, তাই ত্বকের জন্য কোমল সাবান ব্যবহার করা শ্রেয়।
© সাবান-পানির ব্যবস্থা না থাকলে কমপক্ষে ৬০% অ্যালকোহলযুক্ত বিশেষ হাত জীবাণুমুক্তকারক দ্রবণ (হ্যান্ড স্যানিটাইজার) দিয়ে হাত কচলে ধুতে হবে। তবে সুযোগ পেলেই নোংরা হাত সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে নেওয়া সবচেয়ে বেশী উত্তম।
কখন হাত ধুতে হবে?
কখন হাত ধুতে হবে তা জানার জন্য নিচের নির্দেশনাগুলি মনে রাখা জরুরি
১) নাক ঝাড়ার পরে, কাশি বা হাঁচি দেবার পরে হাত ধোবেন।
২) যেকোনও জনসমাগমস্থল যার মধ্যে গণপরিবহন, বাজার কিংবা উপাসনাকেন্দ্র অন্তর্ভুক্ত, সেগুলিতে পরিদর্শন করার পরেই হাত ধোবেন।
৩) বাসা থেকে কর্মস্থলে পৌঁছাবার পর হাত ধোবেন।
৪) কর্মস্থল থেকে বাসায় পৌঁছাবার পর হাত ধোবেন।
৫) ঘরের বাইরের যেকোনও বস্তুর পৃষ্ঠতল হাত দিয়ে স্পর্শ করার পরে হাত ধোবেন।
৬) যেকোনও রোগীর সেবা করার আগে, সেবা করার সময়ে বা তার পরে হাত ধোবেন।
৭) খাবার আগে ও পরে হাত ধোবেন।
৮) শৌচকার্য করার পরে হাত ধোবেন।
৯) বর্জ্যপদার্থ ধরার পরে হাত ধোবেন।
১০) পোষা প্রাণী বা অন্য যে কোনও প্রাণীকে স্পর্শ করার পরে হাত ধোবেন।
১১) বাচ্চাদের ডায়পার (বিশেষ জাঙ্গিয়া) ধরার পরে বা বাচ্চাদের শৌচকার্যে সাহায্য করার পরে হাত ধোবেন।
১২) হাত যদি দেখতে নোংরা মনে হয়, তাহলে সাথে সাথে হাত ধোবেন।
ডাক্তার ও অন্যান্য সকল স্বাস্থ্য কর্মীদের ক্ষেত্রে,
হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেন এক রোগী থেকে আরেক রোগী বা অন্য যেকোনও ব্যক্তির দেহে যেন করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হতে না পারে, সেজন্য সেখানে কর্মরত সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মীকে নিম্নের ৫টি মুহূর্তে অবশ্যই হাত ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে :
১) রোগীকে স্পর্শ করার আগে,
২) পরিষ্কারকরণ বা জীবাণুমুক্তকরণ পদ্ধতি প্রয়োগের আগে,
৩) রোগীর দেহজ রস বা তরল গায়ে লাগার সম্ভাবনা থাকলে ঠিক তার পরপর,
৪) রোগীকে স্পর্শ করার পর এবং
৫) রোগীর আশেপাশের পরিবেশ স্পর্শ করার পর।
ই) হাত ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করার সুব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ:
~রেস্তোরাঁ, চা ও কফিঘর, দোকানপাট, বাজার, বিপণিবিতান, শপিং মল, ইত্যাদি সমস্ত স্থানে হাঁচি-কাশিতে মুখ ঢাকার জন্য ও ভেজা হাত শুকানোর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে কাগজের রুমাল বা টিস্যু পেপারের ব্যবস্থা করতে হবে।
~ হাত জীবাণুমুক্তকারক দ্রবণ (হ্যান্ড স্যানিটাইজারের) এবং/কিংবা সাবান-পানিতে হাত ধোবার ব্যবস্থা করতে হবে।
~ ব্যবহারের পর কাগজের রুমাল ফেলে দেবার জন্য (খোলা নয়, বরং) ঢাকনাযুক্ত বর্জ্যপাত্র বা বিনের ব্যবস্থা করতে হবে।
~ সম্ভব হলে ঘরের বাইরে যাতায়াত বা ভ্রমণের সময় সর্বদা হাত জীবাণুমুক্তকারকের বোতল ও কাগজের রুমাল (টিস্যু পেপার) সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে হবে।
ঈ) নাক, মুখ ও চোখ হাত দিয়ে স্পর্শ না করা:
~করোনাভাইরাস কেবলমাত্র নাক, মুখ, চোখের উন্মুক্ত শ্লেষ্মাঝিল্লী দিয়ে দেহে প্রবেশ করতে পারে। পরিবেশে উপস্থিত করোনাভাইরাস স্পর্শের মাধ্যমে হাতে লেগে থাকতে পারে। তাই আধোয়া জীবাণুযুক্ত হাতে কখনোই নাক, মুখ, চোখ স্পর্শ করা যাবে না। যদি একান্তই নাকে মুখে চোখে হাত দিতে হয়, তাহলে অবশ্যই হাত ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করে তা করতে হবে, কিংবা কাগজের রুমাল ব্যবহার করে নাক, মুখ ও চোখ স্পর্শ করতে হবে। এজন্য সবসময় হাতের কাছে সাবান-পানি বা অ্যালোকোহল ভিত্তিক হস্ত জীবাণুমুক্তকারক কিংবা কাগজের রুমালের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
~ এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিয়মটি মেনে চলা অনেকের জন্য কঠিন হতে পারে। নাক, মুখ ও চোখে হাত দেওয়া খুবই সাধারণ ও স্বাভাবিক একটি ঘটনা এবং বহুদিনের অভ্যাসের বশে প্রায় সবাই কারণে-অকারণে এ কাজটি করে থাকে।
~ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে মানুষ ঘণ্টায় ২০ বারেরও বেশি মুখের বিভিন্ন অংশে হাত দিয়ে স্পর্শ করে। কিন্তু নিজদেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে হলে এই অভ্যাসের ব্যাপারে অনেক বেশী সচেতন হতে হবে। অনেকে মানসিক চাপের কারণে, গভীর চিন্তা করার সময়, অন্য কোনও অজ্ঞাত মানসিক কারণে কিংবা চুলকানির জন্য নাকে, মুখে, চোখে হাত দিয়ে থাকেন। তাই প্রথমে প্রতিটি ব্যক্তিকে নিজেকে বেশ কিছু সময় ধরে নিয়মিত আত্ম-পর্যবেক্ষণ করে দেখতে হবে কোন্‌ কোন্‌ সময়ে বা কারণে সে নিজের নাক, চোখ বা মুখে হাত দিচ্ছে। কারণগুলি চিহ্নিত করার পর এবং এগুলি সম্বন্ধে সচেতন হবার পরে একে একে এগুলিকে দূর করার চেষ্টা করতে হবে এবং নাকে,মুখে, চোখে হাত দেয়ার মাত্রা যথাসর্বোচ্চ সম্ভব কমিয়ে আনতে হবে।
উ) পরিবেশ পরিষ্কার করে করোনাভাইরাস মুক্তকরণ:
~ গৃহ ও কার্যালয়ে যেসব বস্তু অনেক বহিরাগত মানুষ হাত দিয়ে স্পর্শ করে, যেমন দরজার হাতল, কম্পিউটারের কিবোর্ড ও মনিটরের পর্দা, ল্যাপটপ কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, বা অন্য কোনও বহুল ব্যবহৃত আসবাব, ইত্যাদি নিয়মিতভাবে কিছু সময় পরপর জীবাণুনিরোধক স্প্রে বা দ্রবণ দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
~ বাইরে থেকে আসার পর পরিধেয় পোষাক ও অন্যান্য বহুল ব্যবহৃত কাপড় যেমন-বিছানার চাদর, ইত্যাদি নিয়মিত ধুতে হবে।
~ করোনাভাইরাস-বহনকারী সম্ভাব্য ব্যক্তিদের সম্পর্কে করণীয়
~ যে ব্যক্তির জ্বর, সর্দি, কাশি ও হাঁচি হচ্ছে, তার থেকে ন্যূনতম ৩ থেকে ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, যাতে বাতাসে ভাসমান ভাইরাস কণা শ্বাসগ্রহণের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ না করে।
~ রাস্তায় ও যত্রতত্র থুতু ফেলা যাবে না, কেননা থুতু থেকে ভাইরাস ছড়াতে পারে।
~ হাঁচি-কাশি দেওয়া ব্যক্তিকে অবশ্যই কাশি বা হাঁচি দেওয়ার সময় অস্থায়ী কাগজের রুমাল বা টিস্যুপেপার দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখতে হবে এবং সেই কাগজের রুমাল সাথে সাথে বর্জ্যে ফেলে দিতে হবে। খালি হাত দিয়ে কাশি-হাঁচি ঢাকা যাবে না, কেন না এর ফলে হাতে জীবাণু লেগে যায় (হাত দিয়ে হাঁচি-কাশি ঢাকলে সাথে সাথে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে)। কাগজের রুমাল না থাকলে কনুইয়ের ভাঁজে বা কাপড়ের হাতার উপরের অংশে মুখ ঢেকে হাঁচি-কাশি দিতে হবে।
ঊ) বিবিধ:
~ রাস্তায় বা অন্যত্র অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রস্তুতকৃত ও পরিবেশনকৃত খাবার খাওয়া পরিহার করতে হবে, কারণ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রস্তুতকৃত ও অস্বাস্থ্যকর থালা-বাসন-বাটি-পাত্র বা গেলাসে পরিবেশনকৃত খাবার ও পানীয়ের মাধ্যমেও ভাইরাস ছড়াতে পারে।
~ রাস্তায় চলাফেরার পথের ধারে উপস্থিত উন্মুক্ত বর্জ্য কিংবা হাসপাতাল ও অন্যত্র উপস্থিত চিকিৎসা বর্জ্যের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে।
~ হাসপাতালে ও অন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে অবশ্যই বিশেষ চিকিৎসা মুখোশ ও হাতমোজা পরিধান করতে হবে, যাতে ভাইরাস এক রোগী থেকে আরেক রোগীতে না ছড়ায়।
#রোগনির্ণয়ের_পদ্ধতিঃ
১) rRT-PCR পরীক্ষা,
২) ইমিউনিঅ্যাসে,
৩) সিটি স্ক্যান
সাধারণত নাক কিংবা গলার শ্লেষা পরীক্ষাগারে নিয়ে বিপরীত প্রতিলিপিকরণ পলিমার শৃঙ্খল বিক্রিয়ার (rRT-PCR) মাধ্যমে রোগনির্ণয় করা হয়। এছাড়াও স্বাস্থঝুঁকি, বক্ষের সিটি চিত্রগ্রহণের (সিটি স্ক্যানের) মাধ্যমে ফুসফুস প্রদাহের (নিউমোনিয়ার) উপস্থিতি এবং উপসর্গ থেকেও ব্যাধিটি নির্ণয় করা যায়।
কোভিড-১৯ এর কোনো টিকা কিংবা নির্দিষ্ট ভাইরাস নিরোধক নেই। উপসর্গুগলোর চিকিৎসা, সহায়ক যত্ন,আইসোলেশন এবং পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণই করণীয়।
পরিণতিঃ
সংক্রমিত হবার পরে এই ব্যাধিতে মৃত্যুর হার গড়ে ৩.৪%, যেখানে ২০ বছরের নিচের রোগীদের মৃত্যুর হার ০.২% এবং ৮০ বছরের উর্ধ্বে রোগীদের প্রায় ১৫%।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

শুভঙ্করের ফাঁকি

শুভঙ্করের ফাঁকি কন্যা তুমি ধর্ষিতা হও এটাই সমাজ চায়! বলতে পারো তা না হলে বিচার কি সে পায়? হিংস্র দানব জন্মে মানব সুযোগ পেলেই হায় ...