গর্ভগৃহে বাস
গর্ভের সন্তান কি জানে,
পৃথিবী নামক মানব আবাস স্থলে সে আসবে কবে?
গর্ভগৃহ ছেড়ে জীবনে ভেলায় ভাসতে সে বাধ্য হবে ?
সে কি ভাবতে থাকে,
এটাই তার জীবনের সমাপ্তি!
পৃথিবীকেন্দ্রিক তার জীবনকথার ব্যাপ্তি!
পৃথিবীর জন্য নিজেকে মানিয়ে নিতে এখন গর্ভগৃহ বাস!
পৃথিবীর সে জীবনে কেমন হবে তার আগামীর পথচলা ?"
ঠিক জানি না!
হয়তো সে ভাবে, গর্ভগৃহ ছাড়া আর কোন জীবনই নেই!
সে কি কল্পনাশক্তি দিয়ে ভাবতে থাকে পৃথিবীর কথা! সেখানে হয়ত এখানকার মতো অন্ধকার থাকবে না, থাকবে আলো আধারের খেলা, হাঁটবে ঘুরেবেড়াবে,মাতা পিতার ছায়া তার আশ্রয়স্থল হবে, বন্ধু বান্ধব হবে, মুখরোচক খাদ্য খাবে, পানির মাঝে ডুবে থাকতে হবে না মুক্ত বাতাসে এদিকওদিক ছুটে বেড়াবে?
নাকি সে ভাবতে থাকে,
অসম্ভব!
হাঁটার তো কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
খাবার খাওয়া? যতসব হাস্যকর কথা!
পানির জীবন ছেড়ে মুক্তমনে বয়ে চলা বাতাসে ডুবে থাকা জীবন? কি সব আনাড়িপনা নেশাখোরে কল্পনা?
এই আমবিলিক্যাল কর্ড নামক নালীই আমার খাদ্য সরবরাহকারী? পৃথিবী বলে কিছু নেই! গর্ভগৃহই আমার পৃথিবী! এখানকার মৃত্যুই আমার জীবনের সমাপ্তি।এরপর জীবন থাকা সম্ভব নয়, অসম্ভব!
হয়তো সে ভাবতে থাকে,
কিছু একটা অবশ্যই আছে, যা এখানকার চেয়ে একেবারে আলাদা জীবনপথ! কখনও কি সেখান থেকে গর্ভগৃহতে আবার ফিরে আসবে কোনদিন?
নাকি সে ভাবতে থাকে,
গর্ভগৃহ ত্যাগ করার মাধ্যমে জীবনের সমাপ্তি আর এই অন্ধকার ঘরে বোবার মতন নীরব থেকে হাত পা নাড়ানাড়ি করে এপাশওপাশ ফেরা ছাড়া আর কিছুই নেই।এ স্থান এর প্রস্থান আমাকে কোথাও নিয়ে যাবে না।
সে কি ভাবতে থাকে,
অবশ্যই এ স্থানবদল দেখাবে আমায় আমার গর্ভধারিণীকে, অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবো তারপানে, নতজানু হবো কৃতজ্ঞতায়!
নাকি সে ভাবতে থাকে দূরছাই,
এমন কেউ নেই? থাকলে এখন সে কোথায়?
সে কি তবে ভাবতে থাকে,
তিনি সবসময় আমাদের চারপাশে আছেন। তাঁর মাঝেই বেঁচে আছে,তাঁকে ছাড়া এই ভূবনের কথা চিন্তাও করা যায় না?
হয়তো সে ভাবতে থাকে,
আমি তো তাকে দেখতে পাই না! তাই তার কোনো অস্তিত্বই নেই?
নাকি সে নীরব হয়ে ভাবতে থাকে, কান পেতে কখনও কখনও তাঁর কথা শুনতে পায়, তাঁকে অনুভব করতে পারে, বিশ্বাস করতে বাধ্য হয় জন্মের পরের জীবন হলো এক বাস্তবতা এবং সেই বাস্তবতার সম্মুখীন হওয়ার জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করতেই আজ গর্ভগৃহে বাস?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন